কয়েদি নম্বর ৬৫০ - ইমাম আনওয়ার আল-আওলাকি




একজন পাকিস্তানী মুসলিমাহ বছরের পর বছর ধরে আফগানিস্তানের কুখ্যাত বাগরাম কারাগারে বন্দী ছিলেন এবং বর্তমানে তার অবস্থান অজ্ঞাত।  আপনি কি কখনো তার সম্পর্কে কিছু শুনেছেন? সম্ভবত না। একজন মুসলিমাহ এই ধরনের অত্যাচারী কারাগারে বন্দী রয়েছেন, আর তার দেশে বা মুসলিম বিশ্বের কোনো প্রান্তে কোনো সতর্কতার আভাস নেই। কেবল এমন ঘটনা ঘটতে দিয়েই নয়, বরং এ ব্যাপারে একেবারে অচেতনতা প্রদর্শন করে আমরা উম্মাহ হিসেবে কতটা নিচে নেমে গিয়েছি বলতে পারেন?

তার সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায়নি। তিনি কেন ঐ কারাগারে বন্দী? কিইবা অপরাধ ছিল তার? তিনি একজন ভূত-বন্দী (ghost prisoner)। গুয়ান্তানামো বে-র প্রাক্তন বন্দী মোয়াজ্জাম বেগ-এর মতো প্রত্যক্ষদর্শী এবং সাংবাদিক ইভন রিডলি যদি আফিয়া সিদ্দিকীর বিষয়ে আওয়াজ না তুলতেন, তবে আমরা হয়তো তার বিষয়ে কিছু শুনতামই না।

কিছু ইহুদি যখন একজন মুসলিমাহকে অনাবৃত করার সাহস দেখিয়েছিল, তখন রাসূলের  নেতৃত্বে থাকা মুসলিম সেনাবাহিনীর পতাকাগুলো ইহুদিদের দুর্গগুলোকে ঘিরে ফেলতে খুব বেশি সময় নেয়নি। মুসলিম বাহিনীর কাছে তারা পরাজিত হয়েছিল। এবং কেবল অপরাধীদেরকে নয়, বরং পুরো ইহুদি সম্প্রদায়কে মদীনা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। এই বিষয়গুলো এতটাই গুরুতর।

কয়েক শতাব্দী পরে, রোমান সেনারা একজন মুসলিমাহকে বন্দী করে এবং তিনি সেই সময়ের আব্বাসী খলিফা আল-মু’তাসিমের কাছে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলেন। মু’তাসিম তৎক্ষণাৎ বাহিনী একত্রিত করার নির্দেশ দেন এবং একজন মুসলিমাহর আহ্বানের জবাবে রোমান অঞ্চলে আক্রমণে এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। মুসলমানদের কাছে ঐ নারীর আবেদনের জবাব ছিল তৎকালীন পরাশক্তির সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা।

কিন্তু আজ, কয়েক বছর ধরে মার্কিন কাস্টোডিতে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া এই মুসলিমাহর ব্যাপারে কেউ জানে না বা জানলেও আমলে নিচ্ছে না।

 
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, আল্লাহর রাসূল  বলেছেন:

বন্দীকে মুক্ত করো। [সহীহুল বুখারী: ৫৬৪৯]

এটি শেষ সময় অবধি মুসলিমদের জন্য সুস্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ আদেশ। বিজ্ঞ আলিমরা বলেছেন, যদি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তের কোনো মুসলিমকে বন্দী করা হয় তবে তাকে মুক্ত করা পশ্চিম প্রান্তের মুসলিমদের উপর ওয়াজিব হয়ে যায়, এমনকি সেই প্রক্রিয়ায় যদি তাদের সমস্ত সম্পদ ব্যয় করতে হয় তবুও।

এই বোন বন্দী হওয়ার পাশাপাশি একজন নারী-ও। ইসলাম নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এমনকি মুসলিম উম্মাহর সম্মান তাদের নারীদের সুরক্ষার মাঝে নিহিত। কুরআনে প্রথম যে আয়াতে আল্লাহ তাঁর পথে লড়াইয়ের অনুমোদন দিয়েছেন, সেই আয়াতেই তিনি নারী, শিশু এবং দুর্বলদের প্রতিরক্ষার জন্য লড়াইকেও ন্যায্যতা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,

আর তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে এবং অসহায় নারী-পুরুষ এবং শিশুদের সুরক্ষার জন্য লড়াই করছো না, যারা দু’আ করছে, ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে এই যালিম অধ্যূষিত জনপদ থেকে মুক্তি দিন, আপনার পক্ষ হতে আমাদের জন্য একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।’ [আন-নিসা : ৭৫]

আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যে তিনি যেন আমাদের সকল ভাই-বোনকে অত্যাচারীদের কারাগার থেকে মুক্তি দেন।

Post a Comment

0 Comments